প্রকাশিত: ০৪/০১/২০১৮ ৮:৩৪ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৮:৩১ এএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::
মিয়ানমার সেনা নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল এখন উখিয়ার ৮টি অস্থায়ী ক্যাম্প। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দাতা সংস্থা প্রদত্ত ত্রাণ সামগ্রী ভোগ করছে তারা। সেই সাথে অনেকে ত্রাণ সামগ্রী বিক্রি করছে খোলা বাজারে। এ অবস্থায় ক্যাম্প থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা সপরিবারে পালিয়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা জানিয়েছে।
তারা জানায়, মিয়ানমারে স্বচ্ছল জীবনযাপনকারী রোহিঙ্গারাই মূলত ক্যাম্প ত্যাগ করে বিভিন্ন স্থানে বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে স্থায়ীভাবে এদেশে থেকে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছে।
এছাড়া যাদের সন্তানরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে, তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে জাল ভিসার মাধ্যমে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। একাধিক রোহিঙ্গা তাদের অভিমত প্রকাশ করে বলেন, মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যে প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পাদন হয়েছে তাতে ভরসা রাখতে পারছে না তারা। অনেকেই মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে না বললেও এ নিয়ে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
স্থানীয় এনজিও সংস্থা হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক এমএ আবুল কাশেম বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২৫ শতাংশ ধর্ণাঢ্য পরিবারের। যাদের অনেকের সন্তানেরা মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। বাকি ৭৫ শতাংশ পরিবারের মধ্যে ২০ শতাংশ পরিবার স্বচ্ছল। যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে উন্নত জীবন যাপনের জন্য গোপনে দালালের মাধ্যমে ক্যাম্প ত্যাগ করছে। ৫৫ শতাংশ পরিবার হতদরিদ্র। যারা মিয়ানমারের চাইতে এখানে ভালো রয়েছে বলে জানাচ্ছে। তবে তাদের বসতভিটা ফিরে পাওয়ার নিশ্চয়তা ও স্বাধীন চলাফেরার সুযোগ নিশ্চিত করলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে বলে দাবি করছে। তারা আরো জানান, কুতুপালং ক্যাম্প থেকে ইতিমধ্যে প্রায় শতাধিক বড় বড় পরিবার বিদেশে চলে গেছে। আরো কিছু পরিবার চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কুতুপালং আনরেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুর (৩৪) জানান, গত এক মাসে ২শতাধিক রোহিঙ্গা নাগরিককে ক্যাম্পে দেখা যাচ্ছে না। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে কুতুপালং ডি-১ ব্লকের মো. জুবাইর, মো. আলম, নুর মোহাম্মদ, আব্দুল লতিফ, মো. ইউছূপ, আবু তাহের, মো. জুবাইর, মো. আবু তাহের মালয়েশিয়া চলে গেছে।
এছাড়া কুতুপালং ই-২ ব্লকের আতাউর রহমান, আলী জুহার সৌদি আরবে এবং ছৈয়দ নুর, নুরুল আলম, কামাল উদ্দিন কাতার ও হোসন আহাম্মদ আমেরিকা চলে গেছে। তারা কিভাবে গেছে জানতে চাইলে ক্যাম্প সেক্রেটারি বলেন, প্রবাসে অবস্থানরত তাদের স্বজনেরা পাসপোর্ট ভিসাসহ যাবতীয় কাগজপত্র পাঠিয়েছে।
গত ১৮ নভেম্বর সৌদি যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে গেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে ৭ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠায়। ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জাল পাসপোর্ট করতে গেলে রোহিঙ্গা নারী আরজু বেগম (২৪) সহ ২ জনকে আটক করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম।
পাঁচলাইশ থানার ওসি ওয়ালী উদ্দীন আকবর জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সংঘবদ্ধ দালালের মাধ্যমে বিপুল টাকা ব্যয় করে রোহিঙ্গারা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গাদের ৫ হাজার একর জায়গার উপর একত্রিত করে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে নিরাপদ বেষ্টনির মধ্যে রাখার কথা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি আরো বলেন, যেভাবে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তখন আর প্রত্যাবাসন করেও কোন লাভ হবে না।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের বলেন, ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করার জন্য তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর লোকজন যাত্রীবাহী গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে যাত্রীদের নিকট আইডি কার্ড, নাম-পরিচয়, এমনকি চেয়ারম্যান-মেম্বারের নাম জানা আছে কিনা জানতে চাইছে। যারা বলতে পারছে না তাদেরকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত

রামুতে ইয়াবাসহ নারী আটক

কক্সবাজারের রামুতে চেকপোস্টে অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার ২০০ ইয়াবাসহ এক রোহিঙ্গা নারীকে আটক করেছে বর্ডার ...

টেকনাফে চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব; আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ স্বাস্থ্য বিভাগের

জসিম উদ্দিন টিপু,টেকনাফ:: টেকনাফজুড়ে ঘরে ঘরে চিকনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রায় বাড়ী-ঘরে শিশু থেকে ...

নিম্নচাপের প্রভাব: কক্সবাজার সৈকতে ভাঙন, লোকালয়ে জোয়ারের পানি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানি ঢুকে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের কিছু এলাকা ...

সেন্টমার্টিনে খাদ্য সংকট, লোকালয়ে ঢুকছে জোয়ারের পানি

তিনদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে সবধরণের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র ...